সোমবার জমায়াতের আমির নিজামির আপিল শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে বেশ কিছু প্রশ্ন করেছেন।
এতে তিনি জিজ্ঞেস করেন, নিজামীর সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়ে আপনাদের কাছে তো কোনো প্রমাণ নেই। এতে তাঁকে ফাঁসি দেওয়া যাবে কি?
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ১৯৭১ সালে জামায়াতের নেতা মওদুদী যেভাবে উসকানিমূলক বক্তব্য দিতেন, মতিউর রহমান নিজামীও একই ধরনের বক্তব্য দিতেন।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং হত্যাও সংঘটিত হয়েছে— এ বিষয়গুলো তো নিজামীর আইনজীবীরা স্বীকার করেছেন। কিন্তু নিজামী সরাসরি হত্যা, ধর্ষণে জড়িত ছিলেন এমন কোনো প্রমাণ আপনাদের কাছে আছে?
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ ট্রাইব্যুনাল আইনে সরাসরি হত্যায় জড়িত থাকতে হবে এমন কোনো বিধান নেই। এ আইনে হত্যায় কাউকে উৎসাহিত করলে বা উসকানি দিলে তাও অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি শুরু করেন। দুপুর ১টায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
প্রধান বিচারপতি আবারও বলেন, আল-বদর বাহিনীর হয়ে নিজামী বক্তব্য দিয়েছেন এটা ঠিক আছে। কিন্তু তাঁর সরাসরি অংশগ্রহণ কোথায়?
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘জামায়াতের নেতা মওদুদী, গোলাম আজম যেভাবে বক্তব্য দিতেন ঠিক সেভাবে নিজামী চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় সভা সমাবেশে বলেছেন, ‘বদর বাহিনীর মতো হিন্দুদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়।’ ‘বদর বাহিনীর বিজয় হবে ইনশাআল্লাহ। এভাবে তিনি হত্যাকাণ্ডে উসকানি দিয়েছেন।’
প্রধান বিচারপতি আবার প্রশ্ন করেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে সরাসরি অংশ গ্রহণ না থাকলে তাঁকে ফাঁসি দেওয়া যাবে কি?
জবাবে অ্যাটর্নি জোনারেল বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ আইনে সরাসরি জড়িত থাকলে ফাঁসি দিতে হবে এমন কোনো বিধান নেই। অপরাধের ধরন বিবেচনা করে হত্যার পরিকল্পনা, উসকানি দিলে তাঁকে সবোচ্চ দণ্ড দেওয়া যায়।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ‘৭১-এ শহীদ ডা. আলীম চৌধুরী’ নামক বইয়ে নিজামীর নাম উল্লেখ করেননি। কিন্তু সাক্ষ্য দেওয়ার সময় তিনি ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, বুদ্ধিজীবী হত্যায় মতিউর রহমান নিজামী উসকানি দিয়েছেন।’ একই ব্যক্তির দুই রকম বক্তব্য হওয়ায় এতে করে নিজামীর জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ থেকে যায়। তখন কি বইয়ে নিজামীর নাম বলা যেত না?
অ্যাটর্নি জেনোরেল মাহবুবে আলম বলেন, দীর্ঘদিন এঁদের বিচার না হওয়ায় এরা এই দেশে অনেক ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন। হয়তো ভয়ে বইয়ে নাম উল্লেখ করেননি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, নিজামী খুবই ক্ষমতাশালী ছিলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যায় ষড়যন্ত্র করেছিলেন, তবে নিজামীর সরাসরি অংশগ্রহণ ছিল কি না?
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন,‘হিটলার নিজের হাতে কাউকে মেরেছেন, এমন কোনো সাক্ষী নেই। কিন্তু এক বিশাল জনগোষ্ঠীকে পরিকল্পনা করে নিধন করেছেন। একইভাবে নিজামীর দল আল-বদর বাহিনী; মুক্তিযোদ্ধাদের নিধন করার পরিকল্পনা করেছিল।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, নিজামীর ৭১ সালের ঘটনা অস্বীকার করছেন না। কিন্তু সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়ে উল্লেখ করতে পারলেন না।
অ্যাটর্নি জেনারেল আবারও বলেন, ‘‘ট্রাইব্যুনাল আইনে সরাসরি হত্যায় জড়িত থাকার প্রয়োজন নেই—এ ব্যাপারে শুধু বুদ্ধিজীবীর পরিবাররাই নয়, সারা দেশের মানুষ বিচারপ্রার্থী। মানুষ ন্যায়বিচার চায়। এ অপরাধের সাজা একটাই হতে পারে, তা হচ্ছে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকা।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘নিজামী উত্তেজনামূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন। উনি যখন ছাত্রসংঘের সভাপতি, তখন আলবদর বাহিনী গঠিত হয়। আর উনারাই স্বীকার করেছেন, জামায়াতের লোকজনই আলবদরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী ছিলেন।’
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ মামলার অপর আসামি আলী আহসান মুজাহিদ ও ভারতের ইয়াকুব মেনন নিজের হাতে কাউকে মারেননি। মেনন ষড়যন্ত্র করেছেন। ১৯ বছর জেল খেটেছেন। এর পর তাঁর ফাঁসি হয়েছে। তাঁর ফাঁসি কার্যকরও হয়েছে।’
এ পর্যায়ে দুপুর ১টা ৫ মিনিটে শুনানি কার্যক্রম শেষ করেন। আগামীকাল আসামী পক্ষ এ বিষয়ে পুনরায় শুনানি করবেন।
পাঠকের মতামত: